হ্যালো বন্ধুরা, আজকে আপনাদের জন্য বাংলাদেশী একটি নতুন মুভি রিভিউ নিয়ে হাজির হয়েছি। চলুন শুরু করা যাক,
মূলত পুরান ঢাকা ও সদরঘাটের আশপাশকে কেন্দ্র করেই মুভিটির গল্প। করোনার পর ‘ উনপঞ্চাশ বাতাস’ই হচ্ছে কোনো নতুন বাংলা মুভি যা হলে মুক্তি পেল। ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের পূর্ণদৈঘ্য চলচ্চিত্রে কি পেলাম না বলেন!
ড্রামা, রোমান্স, অ্যাডভেঞ্চার, সাই ফাই, থ্রিল, মিস্ট্রি, হরর, মানে সব জনরা মিলে একাকার। খালি অ্যাকশনের অভাব বোধ করেছি। যদিও দেয়া হতো পারলে, যেহেতু বাকি সবই ছিল। একেবারে ৩ ঘণ্টার একটা রাউন্ড ফিগার মুভি দেখতে পারতাম। হয়তো, পরেরবার পরিচালক সেই ঘাটতিও পূরণ করে দেবেন আমার বিশ্বাস। এমন অলরাউন্ড জনরার মুভি কেবল একজন অলরাউন্ডার পরিচালকই বানাতে পারেন, উনার নাম হলো মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। তিনি একাধারে মুভির পরিচালনা, কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য, শিল্প নির্দেশনা ও সংগীত পরিচালনাও করেছেন। হুট করে কেন জানি Shane Carruth এর কথা মনে পড়ে গেল, যে ব্যক্তি সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল সাই-ফাই মুভিটি তৈরি করেছিলাম যেই মুভি নাম ‘Primer’। মাত্র ৮০ মিনিটের ঐ মুভির পরিচালকও উজ্জ্বল সাহেবের মতোই উজ্জ্বল! Shane, ‘Primer’ মুভিতে পরিচালনার পাশাপাশি, প্রোডিউস, রাইটিং, মিউজিক, এডিট, এমনকি মুভির প্রধান ক্যারেক্টারেও অভিনয় করেছেন। খালি এই দিকটা থেকে একটু পিছিয়ে গেছেন ‘ উনপঞ্চাশ বাতাস’এর পরিচালক।
তো যাই হোক, পোস্টার ও ট্রেইলার দিয়ে আকৃষ্ট করা মুভিটির পারফরমেন্স একদম বাজে ছিল। হ্যাঁ, প্রথম দুই মিনিট দেখে মনে হবে ইন্টারেস্টিং কিছু দেখতে যাচ্ছি। কিন্তু, মুভি যখন শেষ হলো, তখন লাগলো সেই দুই মিনিটের মানে কি? এটা কি শুধু মুভির বিজ্ঞাপন ছিলো? ১ম হাফে কিছুই নাই। সিরিয়াসলি কিছু নাই। মানে, নীরা নামে একটা মেয়ে রাস্তায় এক ছেলেকে দেখে ভালো লাগে। ভালো লাগার কারণ, ছেলের খোমা দেখে মনে হচ্ছে সে বাকিদের থেকে ভিন্ন। ওকে, ঠিক আছে, বুঝলাম। এরপর থেকে নীরা, ছেলেকে লুকিয়ে লুকিয়ে সারাদিন অনুসরণ করে। এখান থেকে জানতে পারে, ছেলেটি অসহায় মানুষের সাহায্য করে। তারপর থেকে তো নীরা পুরাই ছেলেটার পাগলা ফ্যান। অয়ন নামক ছেলেটা পুরো মুভিতেই ছিল, তবুও তার ক্যারেক্টার সম্পর্কে বেশিকিছু জানানোই হয়নি। মানে ১৬০ মিনিটের সিনেমায় নায়কের কিঞ্চিত ইতিহাসও প্রয়োজন মনে করেনি নির্মাতা। খালি এটুকু, অয়ন খুবই ভালো ছেলে, মানুষের সহায়তা করে, আর নীরার সাথে প্রেম করে, সেটা দুজনের দেখা হওয়ার পর আরকি। অন্য চরিত্র বলতে এমনেই আসছে, গেছে টাইপ। কাউকেই ঐভাবে নিজের ক্যারেক্টার ডেভেলপের সুযোগ দেয়া হয়নি।খালি, নীরা ও অয়ন ভালোবাসার গল্প দিয়েই এত দীর্ঘ সিনেমা বানানো হয়েছে। জানি না, শেষ কবে এমন সময়কালে লম্বা বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম। তাছাড়া, নায়কের অভিনয়ও তেমন ভালে লাগেনি। সাউন্ড এডিটিংও ভালো ছিল না। বিশেষ করে, নীরার ডায়লগ ইনডোর ও আউটডোরে একই শোনা যাচ্ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ডে গাড়ির শব্দ, ঘরে টিভির শব্দগুলোও ক্যারেক্টারের কথার সমান শোনা যাচ্ছিল, যেটা সহজেই যে কেউ ধরতে পারবে।
বোরিং লাগানোর পাশাপাশি প্রচুর অহেতুক ব্যাপারতো ছিলোই। ট্রেইলারে যে বিজ্ঞানের পাঠ পড়িয়ে আমাদের নজরকাড়ার চেষ্টা হয়েছিল, সেটা মুভির শেষ অংশ দেখে মনে প্রশ্ন আসবেই, এটার দরকার কি ছিলো। তবে উত্তর হিসেবে বলা যেতে পারে, মুভিটাকে টেনে একটু বড় করা। ডায়লগগুলোও তেমন জাতসই লাগবে না। সংলাপগুলোকে কাব্যিক রূপে তুলে ধরতে গিয়ে মাথা ধরিয়ে ফেলেছিল। ঠিক এই কাহিনীটা নিয়েই যদি মুভিটা ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট বা সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টায় রাখা হতো, তাহলে হয়তোবা ওতটাও সিনেমা হলে গিয়ে টর্চার সেলে আছি বলে মনে হতো না।
পজিটিভ দিক বললে, শার্লিনের অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি ও মিউজিকই কোনোমতে ধরে রেখেছিলো। ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করা হয়েছে মুভিতে, যার জন্য বাহবা পেতে পারেন পরিচালক। তবে, ব্যাপারগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাকে ব্যর্থ বলতেই হবে। এর চেয়ে এই বছরের শুরুর দিকে মুক্তি পাওয়া ‘কাঠবিড়ালি’ মুভিটাও বেশ ভালো ছিল। তাই, ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’ নিয়ে মিডিয়া আর কিছু মানুষের ফালাফালি দেখে মনে হয়েছিল মুভিটা কি না কি জানি। তবে, মুভির বাতাসের সাথে হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। যারা মুভিটি দেখেছেন, তারাই বুঝবেন ভালো। মুভিটা মোটামুটি হলেও ভালো দিকগুলো বেশি করে বলা যেতো। যারা দেখেননি তাদের জন্য সহজ ভাষায় বললে, এখানে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর মতো বিনোদনও পাবেন না, না পাবেন ‘আয়নাবাজি’র মতো কোনো মজবুত প্লট। মূলকথা, টাইম পাস করার মতোও মুভি না ‘ উনপঞ্চাশ বাতাস’।
আশা করি আপনাদের কাছে লেখাটি ভালো লেগেছে। ভবিষ্যৎে আরো একরকম অনেক মুভি রিভিউ নিয়ে হাজির হবো। আজকের মতো এখানেই বিদায়।