হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন ? আজকে আপনাদের জন্য Cheeni Bengali মুভি রিভিউ নিয়ে হাজির হয়েছি। এটি একটি ফ্যামিলি ড্রামা। আশা করি মুভিটি সকলে দেখবেন। চলুন রিভিউটি পড়ে পেলুন।
Movie: ‘Cheeni’
Director: Mainak Bhaumik
Cast: Aparajita Adhya, Madhumita Sarcar, Saurav Das
Genre: Family Drama
Language: Bengali
IMDb: 6.2/10
Personal Rating: 9.5/10
“সন্তানেরা হল ধারালো চাকুর মত!
তারা না চাইলেও মায়েদের কষ্ট দেয়! আর মায়েরা তাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত সন্তানদের সাথে লেগে থাকে! প্রখ্যাত দার্শনিক জোয়ান হ্যারিসের আলোচ্য উক্তিটির সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য আমাদের নিশ্চয় কোন আনুষ্ঠানিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে না, এরজন্য প্রয়োজন সামান্য একটু পর্যবেক্ষণ!
আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজেদের ব্যক্তিজীবনে স্বল্প পরিসরে অনুসন্ধান করি তবেই বেরিয়ে আসবে এর যথাযথ ফলাফল! জঠরে ধারণ করে দশ মাস দশদিন বিভীষিকাময় কষ্টের সাক্ষী হয়ে যে মানুষটি আমাদের পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন, তিনি আমাদের গর্ভধারীণি! প্রত্যেকের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের গ্রাফ আঁকতে গেলে যে মানুষটির অনুপাত ঘুরেফিরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করবেই, তিনিই হচ্ছেন ‘মা’! একটি মাত্র ছোট্ট শব্দ, অথচ রক্তমাংসে গড়া এই সত্তাটির পুরোটাই যেনো বিধাতার সমস্ত সৃষ্টির সৌন্দর্য একাই প্রতিফলন ঘটায়!
‘মা’ হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনাসূদে অকৃত্রিম ভালোবাসা! কিন্তু অমোঘ সত্যের বিধান হল- ‘যে জিনিস আমরা খুব সহজেই পেয়ে যায়, তার প্রতি উপেক্ষা, অযত্নটা একটু বেশিই থাকে।
মায়ের ক্ষেত্রেও সন্তানের ভালবাসা যুগ যুগ পেরিয়ে ঠিক তেমনি হয়ে আসছে! সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে নিদ্রাহীন রাত্রি যাপন কিংবা স্বামী-সন্তানের অদেশ পালনের দাসীবৃত্তি সত্তাটি দিনশেষে মূল্যহীন হয়ে যায়!
স্বামী হয়তো কিঞ্চিৎ ভুলের শাস্তি হিসেবে শত কথার দাবানলে পুড়াতে থাকে, আর সন্তান হয়তো আধুনিকতার আবরণে চাপা পড়ে মাতৃত্বের স্নেহকে ‘শত প্রাচীন আধিক্ষেতা’ আখ্যা দিয়ে পুরনো ডায়রীর মত তুলে রাখে অবহেলার বুকসেল্ফে! স্বামীর মানসিক যন্ত্রণার ঔষধ হিসেবে প্রতিটি ‘মা’ মন থেকে চান তার সন্তান হয়তো ঐ নিদারুণ কষ্টের মুহূর্তে মন ভাল করার ডাক্তার হবে!
কিন্তু দূরে অবস্থানরত সন্তান হয়তো বারবার মায়ের ফোনকল পেয়ে বিরক্ত, রেগে অগ্নিশিখার মত উত্তপ্ত, তার এত সময় নেই মায়ের সাথে গল্প করার, একজন নিত্য চুলো ঠ্যালা কিংবা সেকেলে মগজে ঠাসা মানুষের জন্য সব বিরক্তি বোধহয় জমা করা আছে! তাইতো কোন প্রকার বিনিময় ছাড়া মায়ের খাঁটি ভালবাসা অনুভব না করে সন্তানেরা প্রতিনিয়ত তার দুঃস্বপ্নের কারণ হয়! সবসময় বাহ্যিক হাসি দেখে অভ্যস্ত সন্তানেরা মায়ের অভ্যন্তরীণ দহণ অনুসন্ধান করতে কখনোই আগ্রহী হোন না, হয়তো নষ্ট হবে মূল্যবান সময়, বিকল হবে আধুনিকতার বুননে ঠাসা মস্তিষ্ক!
এত শত অবজ্ঞা- তবুও পরিবারের প্রতি একজন ‘মা’ সর্বদা কর্তব্যনিষ্ঠ, সম্পর্কের সুতোটার সঠিক নকশা আবিষ্কারে নিজেকে সঁপে দেন আমৃত্যু পর্যন্ত! আজকের গল্পটা তেমনি এক ‘মিষ্টি’ মায়ের গল্প, যে কিনা সংসার জীবনে অনুপ্রবেশ করে নিজের চঞ্চলতা, স্বাধীনতা, পছন্দ-অপছন্দ বিসর্জন দিয়েছেন, তারই সাথে কিশোরী বয়সের স্বপ্নকে দিয়েছেন জলাঞ্জলি! স্বামীর শত অত্যচার সহ্য করেও মহীয়সী এই নারী জীবন যুদ্ধে জিতে যেতে চান, একমাত্র মেয়ের চোখে আলতো করে ভালবাসার রঙ ছড়িয়ে দিতে চান!
কিন্তু মেয়ে ‘চিনি’ মায়ের প্রতি বড্ড হেয়ালী, মাত্রারিক্ত বিরক্তও বটে! ছোট্টবেলা থেকেই আটপৌরে বাঙালি মাকে প্রতিনিয়ত বাবার হাতে নির্যাতিত হতে দেখেছে, কখনোই প্রতিবাদী হতে দেখেনি! তার এই নীরব দহন মেয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি! তাছাড়া, বাবার প্রয়াণে মায়ের চোখেমুখে কষ্টের ছাপ দেখতে না পাওয়াটাও কিঞ্চিৎ অবাক করে তাকে! মা সবসময় চেয়েছেন শত ঝড়-সাইক্লোন তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হোক, মেয়ে তার স্নেহের মই বেয়ে সাফল্যের শীর্ষে বিচরণ করুক, হৃদয়ে বাঙালিয়ানার আবেশ বজায় রাখুক! কিন্তু মেয়ে তার চিন্তাভাবনার একেবারেই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে! ওয়েস্টার্ন ড্রেস, স্মোকিং, ওয়াইন পার্টি, নাইট ক্লাব, লিভ টুগেদার এ সবকিছুই তার প্রতিটি রন্দ্রে মিশে গেছে! আধুনিকতার এসিডে ঝলসে যাওয়া ফ্যাশন ডিজাইনার মেয়ের কাছে মায়ের কষ্ট, একাকীত্ব কিংবা সেকেলে চিন্তাভাবনা বিরক্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়!
স্বামীহারা বিধবার একাকীত্ব যেনো বিমূর্ত হয়ে উঠে তার একটু ভাল থাকার কারণ অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে!
প্রতিবার ফোনকলে মেয়ের শত তাচ্ছিল্যের সুর শুনে নিজেকে নিজের মত আবিষ্কারের প্রয়াস চালায়, বদলে ফেলে নিজের খোলস, বিভিন্ন কর্মে হয়ে উঠে আধুনিক মায়ের প্রতিচ্ছবি!
মায়ের হঠাৎ বদলে যাওয়া স্তব্ধ করে দেয় মেয়েকে! নিঃসঙ্গ মায়ের অবাদ চলাফেরা, শারীরিক অসুস্থতা, ডক্টরের ফোনকল- এ সবকিছু প্রচন্ড ক্ষোভ সৃষ্টি করে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর মতো ভয়ানক রূপে ছুটে আসে মায়ের কাছে, সাথে অনুপ্রবেশ ঘটে লিভটুগেদার বয়ফ্রেন্ড! শুরু হয় মা-মেয়ের তুমুল দ্বন্দ্ব, একে অন্যকে শুধরানোর অপচেষ্টা, মনোজ্ঞ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ আর ‘মা-মেয়ের’ সুমিষ্ট সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মহৌষধের অনুসন্ধান! কিন্তু অদ্ভুতভাবে এ যুদ্ধের ময়দানে মেয়ে খুঁজে পায় মায়ের প্রকৃত সৌন্দর্য, তার সরলতা, তার অভ্যন্তরীণ ক্ষত, না বলা শত কষ্টের রক্তাক্ত দলিল! যখন সময় এল মুগ্ধতার তখনি বুঝি ঝড় উঠে জীবন নদীতে, তীব্র ঢেউ এসে ভেঙ্গে দিয়ে যায় শেষ আশ্রয়টুকু, বিলীন করে দেয় ভালবাসা, উপড়ে ফেলে মমতার বৃক্ষটুকু!
চিনির বয়ামে পিঁপড়ার উপদ্রব কতোটা যন্ত্রণাদায়ক তা একমাত্র ভুক্তভুগিরাই ভালো করে বুঝতে পারে! বিশেষ করে গৃহিণীরা অনেক বেশিই বিরক্ত থাকেন পিঁপড়ার যন্ত্রণায়! চিনির বয়াম সবগুলোর ঢাকনা ভালো করে আটকে রাখলেও পিঁপড়া উঠবেই! আর যখন কোনো খাবার বা পানীয়তে চিনি ব্যবহার করতে যাওয়া হয় তখন খাবারে ভেসে উঠে পিঁপড়া যা খুবই বিরক্তিকর! তেমনি চিনির পিঁপড়ের মত মানব জীবনেও শত সমস্যা এসে বিগড়ে দেয় সম্পর্কের গতিপথ! অতিরিক্ত চিনি যেমন খাবারের স্বাদ নষ্ট করে, তেমনি অতিরিক্ত অভিমানও সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলে! তাই সম্পর্ককে পিঁপড়েহীন চিনির মত স্বচ্ছ-সুন্দর রাখতে তাতে প্রতিষেধক হিসেবে আবেগ, ভালবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা সঠিক অনুপাতে রাখতে হবে, তবেই প্রতিটি সম্পর্ক হবে সুখী-প্রাণবন্ত!
অন্যথায় পিঁপড়ের মতোই কোন এক অদৃশ্য আগন্তুক এসে চুরি করে নিয়ে যাবে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদকে, তখন হয়তো অনুশোচনা করার সময়ও থাকবে না! ‘চিনি’ সিনেমায় মা-মেয়ে চরিত্রে ‘অপরাজিতা আঢ্য’ এবং ‘মধুমিতা’ দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন! অপরদিকে, ‘চিনি’-র প্রেমিক চরিত্রে ‘সৌরভ’ আলাদাভাবে মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছে! সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আর যথোপযুক্ত গানের ব্যবহার মনে প্রশান্তি দেয়! নানা খুনশুটি আর অভিমানে মা-মেয়ের মিষ্টি-মধুর সম্পর্ক শৈল্পিক ফ্রেমে বন্দি হয়! জীবন গল্পে ট্রাজেডি রেখে ‘চিনি’ শেষ হয়ে যায়, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে বিষাদের অশ্রুতে! হেডফোন কান থেকে অপসারিত হলেও একটি গান বাজতে থাকে অবিরাম —-
“তুমি থাকো আর কিছুক্ষণ
আজ ছুঁয়ে আমায়,
চলে যেতে চাইলেই কি
চলে যাওয়া যায়?
সাদা কালোয় বয়স আঁকে
স্মৃতির কারুকাজ,
ভুলে যাওয়া গল্পগুলো
আসছে ফিরে আজ!
কী নামে ডাকি?
বলো কী করে থাকি?
তোমাকে কিভাবে আমি আগলে রাখি?”
আজ এই পর্যন্তই আশা করি মুভি টি দেখবেন। আর পোস্ট টি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট আর সেয়ার করবেন।